দোয়া কবুলের গল্প
দোয়া কবুলের গল্প কুরআন হাদিসের আলোকে অনেক আছে। একটা কথা না বললেই নয়! সেটা হলোঃ দোয়া, দোয়া ... এবং দোয়া! দোয়া ছাড়া কোন ভাবেই আল্লাহ্র অনুগ্রহ পাওয়া সম্ভব না। একমাত্র দোয়া ই পারে আল্লাহ্র সিদ্ধান্ত কে বদলাতে। আজ আমরা 'ইস্তেগফার ব্লগ' -এর এই পোস্ট এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো 'দোয়া কবুলের গল্প' এবং 'মুসতাজাবুদ দাওয়াহ' নিয়ে।
এছাড়াও দোয়া কবুলের গল্প গুলো বাস্তব জীবন থেকে পড়ার জন্য ফেসবুকের সার্চ অপশনে গিয়ে লিখুন 'দোয়া কবুলের গল্প'। একই ভাবে আপনি ইউটিউবে গিয়েও যদি 'দোয়া কবুলের গল্প ' লিখে সার্চ করেন তাহলে অনেক ভাল ভাল বক্তার বক্তব্য শুনতে পাবেন দেখতে পাবেন। দোয়া কবুলের গল্প নিয়ে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুরের অনেক ক্লিপ পাবেন।
স্বনামধন্য লেখক রাজিব হাসান এর বই দুআ কবুলের গল্পগুলো পড়তে পারেন। দুইটি খন্ড আছেঃ দু’আ কবুলের গল্পগুলো ১ ও ২ (পেপারব্যাক)। দুআ কবুলের গল্পগুলো বইটি মূলত একটি অনুবাদ গ্রন্থ। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে ইসলামিক স্কলারদের লেকচার থেকে এর মূল কনটেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হলো মহান আল্লাহ্ পাকের সেই প্রিয় বান্দা; সেই প্রিয় গোলাম যার দোয়া চাইতে দেরি হবে কিন্তু মহান আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করে নিতে কোন সময় লাগবে না! কোন দেরি হবে না তাঁর দোয়া কবুল হতে!
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হলো সেই ব্যক্তি যার দুয়া করতে শুধু সময় লাগবে কিন্তু দোয়া কবুল হতে কোন সময় লাগবে নাহহহ!
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ বলতে কি বুঝায়?
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ বলতে কি বুঝায়?মুসতাজাবুদ দাওয়া কথাটার অর্থ কি দাড়ায়? মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ মানে হলো যার সব দু'আ কবুল হয়, তিনিই মুসতাজাবুদ দাওয়াহ। ইস্তেগফার এমন এক বরকতময় ইবাদত যার বদৌলতে মানুষকে আল্লাহর কাছে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে কবুল করিয়ে নেয়।
‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে নিজেকে তৈরির অন্যতম আমল হলো আঠার মতো ইসতেগফারের সঙ্গে লেগে থাকা। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে সদা-সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নিয়তে ‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ (اَسْتَغْفِرُ الله - اَسْتَغْفِرُ الله); পড়তে থাকা, জপতে থাকা।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার শর্ত কি?
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হতে হলে কি কি শর্ত পূরন করতে হবে? মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার শর্ত কি? আল্লাহ্র নেককার ও পুণ্যবান বান্দা কেউ যদি পাঁচটি শর্ত পুরণ করতে পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ... সে “মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ” হতে পারবে। তাঁর দোয়া মহান আল্লাহ্ কবুল করে নিবেন ই! তার দোয়া বিফলে যাবেনা!!
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার শর্ত গুলো কি কি? জেনে নিন মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার শর্তগুলো।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার ৫টি শর্তঃ
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার প্রথম শর্ত:
তাঁর আয়-রোজগার অবশ্যই হালাল হতে হবে । কেননা এক বিন্দু পরিমান হারামও যদি খায় তাহলে তার কোন ইবাদত বন্দেগী কিছুই কবুল হবে নাহ!
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত :
সে যখন দোয়া করবে তখন কেবল মহান আল্লাহর কাছেই চাইবে । অন্য কোনো মাধ্যম ধরে কিংবা মাজারে মাথা ঠুকে নয় ।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার তৃতীয় শর্ত:
মনের ভিতর দৃঢ় ঈমান ও প্রবল বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করতে হবে যে আমার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ... ।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার চতুর্থ শর্ত :
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে দুরুদ পাঠ করে তারপর সমস্ত নেক ইচ্ছা পেশ করতে হবে মহান আল্লাহ্র দরবারে । কেননা রাসুল (সা:) এর উপর দুরুদ পাঠ না করলে সেই দোয়া উর্ধাকাশে পৌঁছায় না ।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার পঞ্চম শর্ত :
শুধু দোয়া নয়! দোয়ার সাথে কাজও লাগবে; নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে । অর্থাৎ কেউ যদি তার ভালো পারফরমেন্স এর জন্য দোয়া করে তাহলে তাকে সেটা অর্জনে চেষ্টাও করতে হবে; কেউ যদি অসু্স্থ হয় তাকে সুস্থতার জন্য ওষুধ খেতে হবে।
দুনিয়াতে কেবল হালালের মাঝেই রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। হালাল রুজি আয়-রোজগার এর মাধ্যমে হালাল ভক্ষন করুন। মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ হওয়ার জন্য আমল করুন।
দোয়া কবুলের গল্প । মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ
দোয়া কবুলের গল্প এর মাধ্যমে মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ এর একটি সত্য ঘটনা জানবো। এই ঘটনাটি ঘটেছিল হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর জমানায়। প্রসিদ্ধ আলেম ও হাম্বলী মাজহাব এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এর সেই মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ এর সত্য ঘটনাটি পড়ে নিই।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ । ইমাম হাম্বল ও রুটিওয়ালার গল্প
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও প্রখ্যাত আলেম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) হাদীস সংগ্রহের কাজে দেশ-বিদেশে সফর করতেন। তিনি দেশ-দেশান্তরে গিয়ে হাদীস সংগ্রহ করতেন। একবার হাদীস সংগ্রহের কাজে বের হলে তাঁর জীবনে ঘটে মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ এক অলৌকিক ঘটনা। এক স্মরণীয় ঘটনা! মুস্তাজাবুদ- দাওয়া এর কাহিনী।
হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) বৃদ্ধ মানুষ; হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! বাইরে ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা কনকনে শীত।
শীতের রাত! তিনি চিন্তা করলেন যে মসজিদে রাতটা পার করেই সকাল বেলা আবার হাদীস সংগ্রহের কাজে রওনা হয়ে যাবেন। ব্যাগ থেকে কাঁথা বাহির করে মসজিদে রাত যাপনের জন্য বন্দোবস্ত করতে লাগলেন।
এমন সময় সেই মসজিদের খাদেম এসে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে নিষেধ করলেন এখানে রাত না কাটাতে। তিনি বললেন যে এখানে ঘুমানো যাবে না। মসজিদে ঘুমানো যাবে না। তিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে চিনতেন না। এজন্য তিনি সেখানে তাকে থাকতে ঘুমাতে দেননি।
তো আল্লাহ্র অলি মসজিদ থেকে বের হয়ে আবার সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। কোথায় রাতটা যাপন করা যায়?
এটা ভাবতে ভাবতে সামনে আগাতে লাগলেন। এক সময় দেখলেন যে একজন রুটিওয়ালা একটা চুলার মধ্যে তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন।
রুটিওয়ালা বৃদ্ধ হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) কে দেখে বললেনঃ
– আসসালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহ! মুসাফির বুঝি আপনি? আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আজকের রাত আমার সাথে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনি। আমি ওপাশের দোকানে রুটি বানাই; একটু কষ্ট হয়তো হবে আপনার।
রুটিওয়ালার এমন সুন্দর ব্যবহারে খুব খুশি হলেন ইমাম হাম্বল। রুটি বানানো লোকটির সাথে গিয়ে তার ঘরে উঠলেন। শোয়ার আয়োজন করে দিয়ে আবার রুটি বানাতে লেগে গেলেন রুটিওয়ালা। বিছানায় আধশোয়া ইমাম হাম্বল খেয়াল করছিলেন- কাজের ফাঁকে ফাঁকে কি যেন পড়ছেন তাঁকে আশ্রয় দেয়া রুটিওয়ালা মানুষটি।
ইমাম হাম্বল তখন রুটিওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলেন---
– কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ভাই? রুটি বানাতে বানাতে আপনি কিছু পড়ছেন মনে হচ্ছে। দয়া করে বলবেন কি পড়ছেন?
– তেমন কিছু না, ইস্তেগফার (মহান আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করছি।
– এই যে কাজের ফাঁকেও একটানা ইস্তেগফার করছেন, কোন লাভ কি হয়েছে আপনার? কোন ফায়দা পেয়েছেন?
– জ্বী জনাব। আলহামদুলিল্লাহ, আমার মনে হয় এই ইস্তিগফারের কল্যাণেই মহান আল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় সকল দোআ কবুল করেছেন; শুধু একটি দোআ ছাড়া!
– আপনার কোন দোয়াটি কবুল করেন নি মহান আল্লাহ পাক?
– আমাদের এখান থেকে অনেক দুরে আল্লাহর এক প্রিয় বান্দা থাকেন। জ্ঞান-গরিমা, মেধা-যুক্তি সবকিছুতেই আল্লাহ পাকের রহমত-প্রাপ্তদের একজন তিনি। আমার খুব ইচ্ছা – একবার যদি তাঁর সাথে দেখা করতে যেতে পারতাম? কিছুটা সময় যদি কাটাতে পারতাম সেই জ্ঞানী বান্দার সাথে? আল্লাহ পাক আমার এই প্রার্থনাটি-ই শুধু কবুল করেন নি এখনও। নিশ্চয়ই কবুল করবেন তিনি ইনশাআল্লাহ... । আমার কোন গুনাহের কারণে হয়তো এখনো কবুল হচ্ছে না।
ইমাম হাম্বল এর চোখ ভারী হয়ে এলো কান্নায়। ধরা গলায় কান্না চেপে তিনি জিজ্ঞেস করলেন - - -
– আপনি কি আহমদ ইবনে হাম্বলের কথা বলছেন ভাই?
– জ্বী জনাব। আমি শায়খুল ইসলাম, জগত বিখ্যাত মুজতাহিদ ও মুহাদ্দীস ইমাম আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল এর কথাই বলছি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি অবিরাম রহমত বর্ষণ করুক।
ইমাম হাম্বল তখন রুটিওয়ালার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছেন। এতদিন ধরে দ্বীনের এত খিদমত করে যাচ্ছেন; তারপরও তিনি মুসতাজাবুদ দাওয়াহ হতে পারলেন না! অথচ এই রুটিওয়ালা, সে কিনা মুসতাজাবুদ দাওয়াহ! এ কী করে সম্ভব?
ইমাম হাম্বল এবার উঠে এসে রুটিওয়ালার পাশে দাঁড়ালেন আর বললেনঃ
"কসম সেই পবিত্র স্বত্তার ! - যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আপনার ইস্তেগফার আল্লাহ পাক শুধু কবুল ই করে নি; উপরন্তু আমাকে এই দূর দেশে, অচিন শহরে, মধ্য রাতে – আপনার ঘর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন!! আমি-ই মহান আল্লাহ তাআ’লার সেই অধম বান্দা – আহমাদ ইবনে হাম্বল! (সুবহানাল্লাহ!)।
রুটিওয়ালাও নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। বিহ্বল হয়ে গেলেন। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে যুগ-শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল কে জড়িয়ে ধরে হাত ধরে মোসাফাহা করলেন; কপালে চুমু খেয়ে কাঁদতে লাগলেন! আর মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বালের কাছে দোয়া চেয়ে বললেন-
‘হে ইমাম! মহান রাব্বুল আলামিন আমার কোনো দোয়া বাকি রেখে দেননি! যা একটা বাকি ছিল তাও আল্লাহ তা'আলা কবুল করে নিয়েছেন ইস্তিগফার এর কারণে! এ হচ্ছে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’!! সুবহানাল্লাহ!!!
ইস্তিগফার এর কারণে আল্লাহ তা'আলা এক রুটি বিক্রেতাকে 'মুসতাজাবুদ দাওয়াহ' হিসেবে কবুল করেছেন।
সুতরাং যদি কোনো বান্দা ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ অর্থাৎ ইস্তিগফার এর সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকে তবে সে হবে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’। আল্লাহ তাআলা ইসতেগফারের কারণে বান্দার সব চাওয়া পূরণ করে দেবেন।
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ; ইমাম হাম্বল ও রুটিওয়ালার গল্প অডিও শুনুন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুর এর কন্ঠেঃ
Istighfar Blog থেকে আরো পড়ুন...
মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ | মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুর
মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুর এর একটি ইউটিউব ভিডিও দেখুন দোয়া কবুলের গল্প এবং মুস্তাজাবুদ দাওয়া নিয়ে।
দোয়া কবুলের গল্প - দোয়া কবুলের আমল - মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ: শেষকথা
ধন্যবাদ আপনাকে 'দোয়া কবুলের গল্প' এবং 'মুসতাজাবুদ দাওয়াহ' নিয়ে 'ইস্তেগফার ব্লগ' -এর এই আয়োজনের সাথে থাকার জন্য। কথা হবে পরবর্তীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে। আপনার নিজের কোন 'দোয়া কবুলের গল্প' বা, 'মুসতাজাবুদ দাওয়া' নিয়ে জানা থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। যে কোন মন্তব্য, পরামর্শ জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে। --- জাযাকাল্লাহ খাইরান।