তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ২০২২

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, সময় ও ফজিলত; তাহাজ্জুদ অর্থ কি? তাহাজ্জুদ মানে কি? কিয়ামুল লাইল; তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব; তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, সময় ও ফজিলত

আমরা সকলেই কম বেশি জানি তাহাজ্জুদ সালাত সম্পর্কে। বিভিন্ন ওয়াজে, বক্তব্যে, আলোচনায়, রেডিও, টিভি, অনলাইন পোর্টাল, ও পত্র-পত্রিকার লেখায় তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে প্রায় সকলেই শুনে থাকি। আজ ইস্তেগফার ব্লগ এর পোস্টের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, সময়, এ নামাজ সুন্নত নাকি নফল? এটি কয় রাকাত পড়তে হয়? এসব বিভিন্ন টপিক নিয়ে জানার চেষ্টা করবো - ইনশাআল্লাহ

tahajjud-namaz-porar-niom-istighfar-blog

তাহাজ্জুদ অর্থ কি? তাহাজ্জুদ মানে কি? কিয়ামুল লাইল

শুরুতেই জেনে নিই তাহাজ্জুদ অর্থ কি? শাব্দিক দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করলে তাহাজ্জুদ এর আরবি প্রতিশব্ধ হলো تهجد, ইংরেজিতে বলা হয় Night Prayer; আর বাংলা ভাষায় অনুবাদ করলে তা দাঁড়ায় 'রাত জেগে থেকে ইবাদত'। আরো একটু বাড়িয়ে বললে বলতে হয় তাহাজ্জুদ হলো - রাতের অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশে নফল নামাজ বিশেষ

রাতের দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে শরিয়তের পরিভাষায় 'সালাতুত তাহাজ্জুদ' বা, তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়ে থাকে। --- ইস্তেগফার ব্লগ

এবার আর একটু বিস্তারিত জেনে নিই -তাহাজ্জুদ মানে কি? তাহাজ্জুদ মানে হলো রাতের নামাজ। এটি আবার 'কিয়ামুল লাইল' নামেও পরিচিত। মুসলমানদের জন্য এটি যদিও একটি ঐচ্ছিক নামাজ, কিন্তু এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

এখন প্রশ্ন হলো তাহাজ্জুদ এর নামাজ কি আসলে সুন্নত নাকি নফল? এই নামাজ যেহেতু ফরজ এবং ওয়াজিব এর পর্যায়ে পড়েনা সেহেতু এই নামাজ হলো নফল নামাজ। আবার রাসুল(সাঃ) নিজে যেহেতু এই নামাজ পড়েছেন সেহেতু এটা সুন্নত নামাজ। তাহলে বলা চলে তাহাজ্জুদ হলো সুন্নত এবং নফল দুই পর্যায়েই পড়ে।

তবে অনেক ওলামায়ে কারাম তাহাজ্জুদ নামাজ কে সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা বলেছেন; অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না। তবে এ নামাজ কে সকল নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলা হয়েছে।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

মহানবী হয়রত মুহাম্মদ(সাঃ) এর নবুওত লাভের আগের সময়ে তাঁর ও সাহাবী'দের ওপর তাহাজ্জুদ এর নামাজ ফরজ ছিল। তখন এটি কোন নফল ইবাদত ছিল না।

মহান আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআন এ রাসুল(সাঃ) কে উদ্দেশ করে বলেনঃ

এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করুন; এটি আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় যে, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রশংসিত স্থানে ('মাকামে মাহমুদ') প্রতিষ্ঠিত করবেন। । - - - সুরা-১৭ বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৯।

তখন রাসুল (সা:) এবং তাঁর সাহাবীগণ তাহাজ্জুদের নামাজ কে ফরজ হিসেবে আদায় করতেন। তখন থেকেই এই নামাজ আল্লাহ্‌র রাসুল(সাঃ) ও সাহাবীগণ এত দীর্ঘ সময় ধরে পড়তেন যে তাদের পা পর্যন্ত ফুলে যেতো! তাহলে সহজে বুঝাই যাচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব কতখানি।

আল্লাহ্‌র রাসুল (সা:) বলেছেনঃ

যদি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না হত তাহলে আমি তা আমার উম্মাতের উপর ফরজ করে দিতাম।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়?

দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময় আর শ্রেষ্ঠ পন্থা হলো তাহাজ্জুদ এর সালাত। এ নামাজ অনেক বরকতময় একটি ইবাদত। মহান আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভের সহজ উপায় এই নামাজ। অন্য সকল মুমিন বান্দার চাইতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী বান্দার মর্যাদা আল্লাহ্‌র কাছে অনেক বেশি।

চলুন জেনে নেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়? তার আরো কিছু ফজিলত।

  • আল্লাহর অতি নৈকট্য লাভের সুযোগ
  • গুনাহ সংঘটিত হতে বাধা দানকারী এই নামাজ
  • জান্নাত লাভের অন্যতম পন্থা
  • তাহাজ্জুদ হলো গুনাহের কাফফারা
  • বিপদ ও রোগমুক্তির উছিলা তাহাজ্জুদ নামাজ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ

প্রতি রাতে শেষ ভাগে মহান আল্লাহ তা'য়ালা প্রথম আসমানে অবতীর্ন হয়ে থাকেন সেই সব বান্দাদের ফরিয়াদ গ্রহনের জন্য যারা রাত্রির এই সময়টা তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিজেদের ইচ্ছা পুরণের জন্য দোয়া চাইতে থাকে।

পবিত্র কুরআন এ তাহাজ্জুদ এর নামাজ

মহান আল্লাহ্‌ তা'য়ালা পবিত্র কোরআন এ মহানবী (সা.)কে তাহাজ্জুদ আদায় করার নির্দেশ দানের সাথে বেহেস্তের একটি অতি উঁচুস্তর 'মাকামে মাহমুদ' দানের আশ্বাস দিয়েছেন।

আপনার রবের নাম সকালে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করুন; রাতের কিছু অংশে আপনার রবের উদ্দেশ্যে সিজদায় নত হোন, আর রাত্রির কিছু অংশে আপনার রবের তাসবিহ পাঠ করুন। - - - সুরা দাহর,আয়াতঃ (২৫-২৬
হে বস্ত্রাবৃত (রাসুল[সাঃ]); রাতের বেলায় ইবাদতে দন্ডায়মান থাকুন, রাতের কিছু অংশ ব্যতীত, অর্থাৎ অর্ধেক রাত অথবা অর্থেক থেকেও কিছু কম করুন,অথবা অর্ধাংশ হতে কিছু বাড়িয়ে করুন আর (নামাজে) কোরআনকে খুব স্পষ্ট করে পাঠ করুন।
- - - [সুরা মুযযামমিল,আয়াতঃ ১-৪]।

হাদীসের আলোকে তাহাজ্জুদ সালাত

আল্লাহ্‌র রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ

হে আমার উম্মতগণ! সালামের ব্যাপক প্রচলন কর, অভাগীদের আহার করাও এবং রাতে দুনিয়া যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করো। তবেই নিশ্চিন্তে তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে। ---আত-তিরমিযী

রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ

যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন মহান আল্লাহ্‌ তা'য়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। আর বলেনঃ কে আছো? যে আমার নিকট দোয়া করবে? আমি তার দোয়া কবুল করবো। কে আছো? যে আমার নিকট কোন কিছু চাইবে? তাকে দান করব। কে আছো? যে আমার নিকট মাগফিরাত চাও? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। ---বুখারী শরীফ

শেষ নবীর উম্মত য় আখেরী জমানার বান্দা হিসেবে তাহাজ্জুদ মহান আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আমাদের জন্য বিশাল নিয়ামত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

আমাদের দেশে কিংবা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে সকল ২৪ ঘণ্টায় দিন হিসেব করলেও ঋতু কিংবা মৌসুম ভেদে সময় হিসেব করতে গেলে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যেতে হবে। আর তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় এবং সুর্যোদয় য় সুর্যাস্তের সময় কে বেইজ ধরে তাহাজ্জুদ নামাজ এর সময় নির্ধারন করতে হয়।

tahajjud-namajer-somoy-istighfar-blog

হযরত আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

আমি প্রিয় নবী করিম (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো তাহাজ্জুদের সালাত

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন?

তাহাজ্জুদ নামাজের শ্রেষ্ঠ সময় কখন? তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন? মূলত রাতের দুই-তৃতীয়াংশ শেষ হয়ে গেলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়। আর তখন থেকে ফজরের সময় শুরু হওয়ার কিছু সময় আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময়। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের সময় শুরুর আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময়। ফজরের সময় শুরু হয়ে গেলে অর্থাৎ সাহরির সময় শেষ হলে তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যায়।

নবী করিম (সাঃ)-এর সময়ে তাহাজ্জুদ এর নামাজের জন্য আলাদাভাবে আজান দেওয়ার প্রচলন ছিল। এখনো মক্কা ও মদিনায় একই নিয়ম চালু রয়েছে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন শুরু হয়?

কিছু কিছু ওলামায়ে কারাম এর মতে - '

এশা'র নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত' তাহাজ্জুদ নামাজের সময়। তবে রাত অর্ধেক পার হলে পড়া ভাল; শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া সর্বোত্তম

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ২০২২

সাধারণভাবে রাত ১২ টার পর থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত অর্থাৎ ফজর আজানের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সালাত পড়া যাবে। আর যদি ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এশা'র নামাজের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে যাবে বলে আলেমগণ মনে করেন। পরিপূর্ণ তাহাজ্জুদের মর্যাদা পেতে হলে রাত ২.৩০ টা বা, ৩.৩০ টার দিকে উঠে নামায আদায় সর্বোত্তম।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সকল মসজিদেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া চিরস্থায়ী নামাজের ক্যালেন্ডার থাকে। আপনি সেখান থেকেও তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ২০২২ থেকে শুরু করে সারাজীবন বা, চিরস্থায়ী সময়সূচী পাবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাআত?

নবী করিম (সাঃ) ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাহাজ্জুদ নামাজের ধরা বাঁধা কোন নিয়ম নেই; এ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বিভিন্ন বর্ণনায় পাওযা গেছে। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। এটা যেহেতু সুন্নত ও নফল ইবাদত সেহেতু যে যার ইচ্ছামত রাকাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে।

বিভিন্ন বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিলেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম

অন্য নামাজের মতই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম-কানুন একই। অর্থাৎ অন্যান্য নামাজের মতই সুন্দর ও সহিশুদ্ধ ভাবে অযু করে নিতে হবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে(যদি অযু না থাকে)।

তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম; যেভাবে শুরু করবেন?

  • সহি-শুদ্ধ ভাবে অযু করে নেয়া।
  • আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে নামাজের জন্য তৈরি হওয়া।
  • তাকবীরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করা।
  • অতঃপর ছানা পড়া।
  • সূরা ফাতেহা পড়া।
  • অন্য সূরা বা, সূরার অংশবিশেষ বা, কেরাত পড়া

আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের সালাতে অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। আর অন্যান্য নামাজের মতই রুকু, সেজদা আদায় করতেন। এভাবে দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মিজানুর রহমান আজহারী [VIDEO]

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে মিজানুর রহমান আজহারী'র একটি ভিডিও। মিজানুর রহমান আজহারী প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর কোরআন থেকে দিয়েছেন যুক্তি সহকারে। জাযাকাল্লাহ, আল্লাহ উনাকে বেশি বেশি করে ইসলামের খেদমত করার তৌফিক দান করুন,--- আমিন।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

নিয়ত মানে হলো এই নামাজ পড়বেন এটা মনস্থির করাটাই হলো নিয়ত বা, পরিকল্পনা। ছোট বেলায় মোক্তবে হুজুর যেভাবে আমাদের কে আরবীতে নিয়ত টি শিখিয়েছেন নিচে উচ্চারণ সহ দেয়া হলোঃ

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ

نَوَيْتُ اَنْ اسَلَى رَكَعَتِى التَّهَجُّ

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নাওয়াইতু আন

নিচে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ দেয়া হলো।

নাওয়াইতুআন; উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা,
রাকআতাই সালাতিত-তাহাজ্জুূদী;
সুন্নাতি রাসুলুল্লাহি তায়ালা;
মুতাওয়াজ্জিহান; ইলাজ-জিহাতিল; কাবাতিশ-শারীফাতি;
আল্লাহু আকবার।

পুনশ্চঃ আমার জানামতে এই সকল আরবি নামাজের নিয়তের কোন অস্তিত্ব নেই। আমি জানিনা এই দোয়া আসলে কিভাবে এলো? কোত্থেকে এলো? আপনার জানা থাকলে কমেন্ট এ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ জানাবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়

তাহাজ্জুদের সালাতে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন ধরাবাধা সুরা নেই বলেই জানি। অন্যান্য সকল নামাজের মতই পড়া যায়। তবে কেরাত দীর্ঘ করে পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদ এর নামাজ অন্ধকারে নাকি আলোতে পড়তে হয়?

তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে আমাদের দেশে অনেকে ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন ও কৌতুহল থাকে, যেমনঃ

  • তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়?
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি জিন আসে?
  • তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করলে কি নিয়মিত আদায় করতে হয়?

উপরের প্রশ্ন গুলোর একটাও সঠিক নয়। যেহেতু নফল ইবাদত বিশেষ কোন উদ্দেশ্য বা, প্রয়োজন নিয়েই পড়া হয় তাই এটি গোপনে করাই বাঞ্ছনীয়।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মহিলা'রা অন্যান্য নামাজ যেভাবে পড়েন ঠিক একই ভাবে পড়লে হয়ে যাবে তাহাজ্জুদ এর নামাজও। নারী পুরুষ দের জন্য আলাদা বা, ভিন্ন কোন নিয়ম নেই। মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম অন্য নামাজের আদলেই।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জাগিয়ে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে ইবাদত করে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। একইভাবে, আল্লাহ সেই নারীর প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে ইবাদত করে এবং নিজ স্বামীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে সে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। - - - [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৮; নাসায়ি, আস-সুনান: ১৬১০; হাদিসটির সনদ সহিহ]
স্বামী-স্ত্রী-পরস্পরকে-জাগিয়ে-রাতে-তাহাজ্জুদ-নামাজ-tahajjud-namaz-husband-wife

স্বামী এবং স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জাগিয়ে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে অনেক নেকী ও ফজিলত পাওয়া যায়। আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হয় দ্যাম্পত্য জীবনে।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া

দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ ইবাদত এই তাহাজ্জুদ নামাজ। এই নামাজ পড়ে আল্লাহ্‌র কাছে নেক নিয়তে কিছু চেয়ে নিরাশ হবার জো নেই। নির্জনে যখন একমাত্র আল্লাহ্‌র কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়ে কিছু চাওয়া হয় আল্লাহ্‌ তখন তাঁর বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।

তাহাজ্জুদ নামাজে বিশ্বনবী যে দোয়া পড়তেন

হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়াতেন, তখন তিনি এই দোয়া পড়তেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু, আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগ-ফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা'আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা। --- বুখারি
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সকল কিছুর কর্তৃত্ব কেবল আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের জ্যোতি। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সকল প্রশংসা।
Istighfar Blog থেকে আরো পড়ুন...

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ২০২২: শেষকথা

ধন্যবাদ আপনাকে 'তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ২০২২' নিয়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য ও জানার জন্য। পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়! সেটা হলো, রাসুল সাঃ এর জীবন-ই হলো আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। আমরা তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করবো, তিনি যেভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছেন, তিনি যেই নিয়মে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করেছেন আমরা ঠিক সেই ভাবেই তাহাজ্জুদ আদায় করবো - ইনশা-আল্লাহ। তবেই আমরা আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য পাবো, ক্ষমা পাবো, জান্নাত লাভ করবো। মহান আল্লাহ্‌ আমাদের কে সঠিক নিয়মে তাহাজ্জুদ পড়ার তৌফিক দান করুন---আমিন।

About the author

Imam Uddin
আমি মুহাম্মদ ইমাম উদ্দিন। Founder Of Istighfar Blog। পড়তে ও লিখতে ভালবাসি। ভালোবাসি নতুন কোন কিছু জানতে ও জানাতে। ভাল লাগে ব্লগিং! আরও ভাল লাগে তথ্য-প্রযুক্তি। গুগলে আমাকে খুঁজুন 'imamuddinwp' লিখে। আমার সাথে যুক্ত হোন জনপ্রিয় সকল স্যোসাল মি…

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অযথা স্পাম না করে গতানুগতিক কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।